বাংলাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলো বাগেরহাট। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত এবং ভৌগোলিকভাবে বঙ্গোপসাগরের তীরে ও সুন্দরবনের কোলঘেঁষা অবস্থানের কারণে একে বলা হয় নদী, বন ও সমুদ্রবেষ্টিত এক অনন্য জনপদ। বাগেরহাটের মানচিত্র শুধু ভৌগোলিক অবস্থানই নয়, বরং জেলার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, নদ–নদী, প্রশাসনিক বিভাজন এবং পরিবেশগত গুরুত্বকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে।

Table of Contents
বাগেরহাট জেলার ম্যাপ
ভৌগোলিক অবস্থান
বাগেরহাট জেলার ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক হলো:
- অক্ষাংশ: ২২°৩২’ থেকে ২২°৫৬’ উত্তর
- দ্রাঘিমাংশ: ৮৯°৩২’ থেকে ৮৯°৪৮’ পূর্ব
সীমান্তে রয়েছে:
- উত্তরে: গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলা
- দক্ষিণে: বঙ্গোপসাগর
- পূর্বে: পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা
- পশ্চিমে: খুলনা জেলা
বাগেরহাটের দক্ষিণ অংশ বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত হওয়ায় মানচিত্রে এটিকে এক অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক চরিত্র প্রদান করেছে।

প্রশাসনিক মানচিত্র
বাগেরহাট প্রশাসনিকভাবে ৯টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হলো:
১. বাগেরহাট সদর
২. ফকিরহাট
৩. কচুয়া
৪. মোল্লাহাট
৫. চিতলমারী
৬. রামপাল
৭. মোড়েলগঞ্জ
৮. মোংলা
৯. শরণখোলা
প্রতিটি উপজেলাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন, গ্রাম ও পৌরসভা গড়ে উঠেছে। মানচিত্রে প্রতিটি উপজেলার সীমানা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা থাকে, যা প্রশাসনিক ও স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

নদ-নদী ও জলাশয়ের অবস্থান
বাগেরহাট জেলা সম্পূর্ণভাবে নদীবাহিত অঞ্চল। মানচিত্রে ভৈরব, পশুর, দড়াটানা, মধুমতি, বলেশ্বরসহ অসংখ্য নদীর অবস্থান সুস্পষ্ট।
- দক্ষিণে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদীগুলো বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
- নদী ও খালের কারণে জেলার মানচিত্রে আঁকাবাঁকা জলপথ বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও বনাঞ্চল
বাগেরহাট জেলার মানচিত্রে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো সুন্দরবন অংশ। শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার বৃহৎ অংশ সুন্দরবনের অন্তর্গত।
- বনাঞ্চল, নদীপথ ও সাগর সংযোগ মানচিত্রে এক অনন্য বৈচিত্র্য তৈরি করে।
- সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় নদীপথ, বনজ সম্পদ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অঞ্চল স্পষ্টভাবে মানচিত্রে দেখা যায়।

যোগাযোগ ব্যবস্থা মানচিত্রে
বাগেরহাটের মানচিত্রে সড়ক, নৌপথ এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত।
- ঢাকা-বাগেরহাট মহাসড়ক
- খুলনা-মোংলা সড়ক
- বাগেরহাট-পিরোজপুর সংযোগ সড়ক
এগুলো জেলার প্রধান সড়কপথ।
অন্যদিকে, মানচিত্রে নদীপথে ঢাকা থেকে হুলারহাট হয়ে বাগেরহাটগামী নৌপথও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
বাগেরহাট জেলার মানচিত্রের গুরুত্ব
১. প্রশাসনিক পরিকল্পনা: উন্নয়ন প্রকল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় মানচিত্র অপরিহার্য।
২. কৃষি ও অর্থনীতি: কৃষিজমি, জলাশয় ও বনভূমি চিহ্নিত করতে মানচিত্র সহায়ক।
৩. পর্যটন উন্নয়ন: ষাটগম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর সমাধি, সুন্দরবন, চন্দ্রমহল ইকোপার্ক ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান মানচিত্রে স্থান পায়।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: উপকূলীয় জেলা হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় মানচিত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাগেরহাট জেলার মানচিত্র শুধু ভৌগোলিক সীমারেখা নয়, বরং এটি জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের প্রতিচ্ছবি। নদী, বন ও সমুদ্রবেষ্টিত এই জেলার মানচিত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা, পর্যটন প্রসার, কৃষি ও মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। বলা যায়, “বাগেরহাট জেলার মানচিত্র হলো এ অঞ্চলের পরিচয়পত্র”—যা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমূল্য তথ্যভাণ্ডার।
১ thought on “বাগেরহাট জেলার ম্যাপ / মানচিত্র”