বাগেরহাট জেলার কৃষি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাগেরহাট জেলার কৃষি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলা বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন, মাছচাষ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খুলনা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বাগেরহাট জেলা কৃষি, মৎস্য, বনজ সম্পদ এবং পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। সুন্দরবন সংলগ্ন হওয়ায় এ জেলার কৃষি প্রকৃতি নির্ভর, আবার কিছু অঞ্চলে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়।

 

বাগেরহাট জেলার কৃষি

 

বাগেরহাটের কৃষির বৈশিষ্ট্য

১. এ জেলার প্রধান ফসল ধান, বিশেষ করে আমন ও বোরো ধান।
২. নারিকেল, সুপারি বিভিন্ন শাকসবজি এ জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. নদী ও খালবিল পরিবেষ্টিত হওয়ায় মৎস্য উৎপাদন কৃষির সাথে সরাসরি যুক্ত।
৪. কিছু এলাকায় চিংড়ি চাষ এবং আধুনিক কৃষি খামার গড়ে উঠেছে।
৫. কৃষিজমির ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন উপজেলায় ভিন্ন আকার ধারণ করেছে – কোথাও ভূমিহীন কৃষকের আধিক্য, কোথাও আবার বৃহৎ জমির মালিক কৃষকের উপস্থিতি রয়েছে।

 

উপজেলা ভিত্তিক কৃষি তথ্য

নিচে উপজেলা ভিত্তিক শ্রেণীভুক্ত কৃষকের সংখ্যা দেওয়া হলো (তথ্য সংখ্যাগুলো অফিসিয়াল হিসাব অনুযায়ী):

উপজেলা অশ্রেণীভুক্ত কৃষক ভূমিহীন কৃষক প্রান্তিক কৃষক ক্ষুদ্র কৃষক মাঝারী কৃষক বড় কৃষক
ফকিরহাট ৭৯৯ জন ০ জন ০ জন ১ জন ০ জন ০ জন
বাগেরহাট সদর ২৯৭১ জন ৩৭৭৩ জন ৩৬৫১ জন ৫৯১২ জন ৮৫৮ জন ৫০ জন
মোল্লাহাট ১৪৭৯৬ জন ০ জন ৯৩১ জন ০ জন ০ জন ২৩৮৯ জন
শরণখোলা ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন
রামপাল ৬৫০ জন ৪৯৫৪ জন ৪০২৫ জন ৭৯৬৪ জন ১৫৮৫ জন ১৭৪ জন
মোড়েলগঞ্জ ২৩৩৯৩ জন ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন
কচুয়া ৩২৫০ জন ৪২৭ জন ১০০২ জন ৫৫২ জন ৫১০ জন ২৪১২ জন
মোংলা ২৮৭৪ জন ৫৫১ জন ৬০৮৮ জন ৫৬৯৬ জন ৭৫৩ জন ৫৪৫ জন
চিতলমারী ১৯৪২৬ জন ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন ০ জন

 

বিশ্লেষণ

  • বাগেরহাট সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষুদ্র কৃষকের উপস্থিতি দেখা যায় (প্রায় ৫,৯১২ জন), তবে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যাও (৩,৭৭৩ জন) বেশ উল্লেখযোগ্য।
  • মোল্লাহাটচিতলমারীতে অশ্রেণীভুক্ত কৃষকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা প্রমাণ করে সেখানে কৃষকরা এখনো পূর্ণাঙ্গ শ্রেণীবিন্যাসভুক্ত হয়নি।
  • মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় অশ্রেণীভুক্ত কৃষকের আধিক্য, যা ভবিষ্যতে সঠিক কৃষি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করে।
  • রামপালমোংলা উপজেলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বেশি, তবে একই সাথে মাঝারী ও বড় কৃষকের উপস্থিতি রয়েছে।
  • শরণখোলা উপজেলায় সরকারি তথ্য অনুযায়ী শ্রেণীভুক্ত কৃষকের সংখ্যা শূন্য দেখানো হলেও, এ এলাকা সুন্দরবন নির্ভর জীবিকার কারণে কৃষির চেয়ে মৎস্য ও বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল।

 

বাগেরহাট জেলার কৃষি মূলত ধান, নারিকেল, সুপারি, শাকসবজি এবং মৎস্য উৎপাদনকেন্দ্রিক। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষির চিত্র ভিন্ন হলেও সামগ্রিকভাবে কৃষি ও মৎস্য সম্পদ এ জেলার অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। সঠিক পরিকল্পনা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং কৃষি সহায়তা কর্মসূচি বাড়ানো গেলে বাগেরহাট বাংলাদেশের কৃষি সমৃদ্ধ জেলাগুলির মধ্যে আরও এগিয়ে যেতে পারবে।

১ thought on “বাগেরহাট জেলার কৃষি”

Leave a Comment