বাংলাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর জেলা হলো বাগেরহাট। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত এবং প্রশাসনিক ও ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে দেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা। নদী, বন, সমুদ্র ও সুন্দরবনের সংযোগে গড়ে ওঠা এ জনপদ ভৌগলিকভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ।

Table of Contents
ভৌগলিক অবস্থান ও সীমানা
বাগেরহাট জেলা ২২°৩২’ থেকে ২২°৫৬’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২’ থেকে ৮৯°৪৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত।
- উত্তরে: গোপালগঞ্জ ও নড়াইল জেলা
- পশ্চিমে: খুলনা জেলা
- দক্ষিণে: বঙ্গোপসাগর
- পূর্বে: পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা
জেলার মোট আয়তন ৫,৮৮২.১৮ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ১,৮৩৪.৭৪ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল (মূলত সুন্দরবন) এবং ৪০৫.৩ বর্গকিলোমিটার জলাশয়। অবশিষ্টাংশ নিম্ন সমভূমি ও কৃষিজমি।
বাগেরহাট সদর শহরের অধিকাংশ ভৈরব নদীর পশ্চিম তীরে এবং শহরের বর্ধিত অংশ দড়াটানা নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছে। ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে—
১. তীরবর্তী উপকূলীয় এলাকা
২. অন্তবর্তী উপকূলীয় এলাকা
প্রশাসনিক কাঠামো
বাগেরহাট প্রশাসনিকভাবে ৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত:
১. মোল্লাহাট
২. চিতলমারী
৩. ফকিরহাট
৪. কচুয়া
৫. বাগেরহাট সদর
৬. রামপাল
৭. মোংলা
৮. মোড়েলগঞ্জ
৯. শরণখোলা
এছাড়া রয়েছে ৭৫টি ইউনিয়ন, ৭২০টি মৌজা, ১,০৪৭টি গ্রাম এবং ৩টি পৌরসভা (বাগেরহাট, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ)।
প্রাকৃতিক ভূপ্রকৃতি ও জলাশয়
বাগেরহাটকে বলা হয় নদী ও খালের জেলা। এখানে রয়েছে—
- নদী: ৩২টি
- খাল: ৫৪৭টি
- বিল: ৩২টি
এছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল সুন্দরবন, যা জেলার ১,৮৬৮.৯১ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। বনাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকা একে বিশেষভাবে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় করেছে।
জনসংখ্যা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাগেরহাট জেলার জনসংখ্যা ১৪,৭৬,০৯০ জন।
- পুরুষ: ৭,৪০,১৩৮ জন
- মহিলা: ৭,৩৫,৯৫২ জন
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবকাঠামো
বাগেরহাটে বহু ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে:
- মসজিদ: ২,৫১৪টি
- মন্দির: ৬৯৪টি
- গির্জা: ১৮টি
এর ফলে জেলার ধর্মীয় ও সামাজিক জীবন বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যে গড়ে উঠেছে।
অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক গুরুত্ব
- সমুদ্রবন্দর: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা সমুদ্রবন্দর এ জেলাতেই অবস্থিত।
- ইপিজেড: মোংলায় একটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) রয়েছে।
- কৃষি, মৎস্য ও বনজ সম্পদ এ জেলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
- ভৌগলিক কারণে এই জেলা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তবে একই সঙ্গে এটি উপকূলীয় সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্র।
বাগেরহাট জেলার ভৌগলিক পরিচিতি থেকে স্পষ্ট যে, এটি নদী, বন, সমুদ্র ও মানুষের সহাবস্থানে গড়ে ওঠা এক অনন্য জনপদ। সুন্দরবন, মোংলা সমুদ্রবন্দর, উর্বর কৃষিজমি ও সমৃদ্ধ জলাশয় মিলিয়ে এই জেলা শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চল।
২ thoughts on “বাগেরহাট জেলার ভৌগলিক পরিচিতি”